কোরবানির গোশত তিন ভাগ করতে হয় কোরবানির নিয়ম ২০২৫

কোরবানির গোশত তিন ভাগে বণ্টনের নিয়ম ও সংশ্লিষ্ট তথ্য (২০২৫)
কোরবানির গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রে ইসলামী নির্দেশনা ও প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে দেওয়া হলো:

কোরবানির গোশত তিন ভাগ করতে হয়:

১. তিন ভাগে বণ্টনের বিধান
উত্তম পদ্ধতি: কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব (প্রস্তাবিত আমল), ওয়াজিব নয় 1314।

১ম ভাগ: নিজ পরিবারের জন্য রাখা।

২য় ভাগ: আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-প্রতিবেশীকে দেওয়া।

৩য় ভাগ: গরিব-মিসকিনদের দান করা।




সমান ওজন জরুরি নয়: ভাগগুলোর ওজন সমান হওয়া আবশ্যক নয়। কম-বেশি করা যাবে 1814।

নমনীয়তা: প্রয়োজনে সম্পূর্ণ গোশত দান করা বা নিজেরা রেখে দেওয়াও বৈধ 59।

২. কোরআন ও হাদিসের দলিল
কোরআনের নির্দেশনা:

"তোমরা তা থেকে খাও এবং অভাবগ্রস্ত ও প্রার্থনাকারীকে খাওয়াও" (সুরা হজ: ৩৬)

হাদিসের বর্ণনা:

রাসূলুল্লাহ (সা.) কোরবানির গোশত তিন ভাগে বণ্টন করতেন, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয় বলে উল্লেখ করেছেন 39।

৩. সামাজিক প্রচলিত ভুল ধারণা 1814
ভুল ধারণা ১: "তিন ভাগে বণ্টন না করলে কোরবানি শুদ্ধ হয় না"।

সত্য: কোরবানির বৈধতা গোশত বণ্টনের উপর নির্ভরশীল নয়; এটি শুধু উত্তম আমল।

ভুল ধারণা ২: "ভাগগুলো অবশ্যই সমান ওজনে হতে হবে"।

সত্য: আনুমানিকভাবে বা প্রয়োজন অনুযায়ী বণ্টন করলেও সমস্যা নেই।

৪. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম
শরিকদের মধ্যে বণ্টন: শরিকানা কোরবানির ক্ষেত্রে গোশত ওজনে সমানভাবে ভাগ করতে হবে। অনুমানভিত্তিক বণ্টন জায়েজ নয় 14।

চামড়া ও চর্বি:

চামড়া বিক্রি করলে তার মূল্য দান করতে হবে। জবাইয়ের আগে চামড়া বিক্রি করা নিষেধ 

চর্বি বিক্রি করা নিষিদ্ধ; মূল্য সদকা করতে হবে 14।

অমুসলিমদের দেওয়া: কোরবানির গোশত অমুসলিম প্রতিবেশী বা আত্মীয়কেও দেওয়া যাবে 

৫. ২০২৫ সালের প্রাসঙ্গিক তথ্য
কোরবানির ঈদের তারিখ: বাংলাদেশে ২০২৫ সালের ৬ জুন কোরবানির ঈদ পালিত হবে 

শরিকানা কোরবানি:

গরু/মহিষে সর্বোচ্চ ৭ জন শরিক হতে পারবেন (প্রচলিত ভুল ধারণা: বেজোড় সংখ্যা জরুরি নয়) 

ছাগলে একজনেরই কোরবানি দেওয়া উচিত

কোরবানির গোশতের বিধান:

কোরবানির গোশতের বিধান ইসলামী শরীয়তের আলোকে নিম্নরূপ:

১. কোরবানির উদ্দেশ্য ও ফরজিয়াত:
কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হানাফি মাজহাব অনুযায়ী, সামর্থ্যবান মুসলিমের উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। অন্য মাজহাবগুলো (শাফিঈ, মালিকি, হাম্বলি) এটিকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (জোর সুন্নত) হিসেবে গণ্য করে।

নিয়ত: কোরবানি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। রিয়া (প্রদর্শনেচ্ছা) বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কোরবানি গ্রহণযোগ্য নয়।

২. যেসব পশু কোরবানি করা যায়:
উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা।

বয়স: উট (৫ বছর), গরু/মহিষ (২ বছর), ছাগল/ভেড়া/দুম্বা (১ বছর)। ভেড়ার ক্ষেত্রে ৬ মাসের পরিপুষ্ট পশুও জায়েজ (হাদিসে বর্ণিত)।

স্বাস্থ্য: পশু সুস্থ ও নিখুঁত হতে হবে। অন্ধ, রোগা, কান বা লেজ কাটা, দাঁতহীন ইত্যাদি ত্রুটিযুক্ত পশু কোরবানি শুদ্ধ নয়।

৩. গোশত বণ্টনের নিয়ম:
পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বণ্টন: কোরবানিদাতা নিজে গোশত খেতে পারবেন, আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের দান করতে পারবেন।

সুন্নত পদ্ধতি: গোশত তিন ভাগ করা মুস্তাহাব (প্রিয় কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়):
১. পরিবারের জন্য,
২. আত্মীয়-বন্ধুবান্ধবের জন্য,
৩. গরিব-মিসকিনের জন্য।

কোরআনের নির্দেশ:

"তোমরা তা থেকে নিজেরা খাও এবং দুঃস্থ-অভাবীকে খাওয়াও।" (সুরা আল-হাজ্জ, আয়াত ২৮)।

গোশত বিক্রি নিষিদ্ধ: কোরবানির গোশত, চামড়া বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করা হারাম। তবে চামড়া দান করা বা ব্যক্তিগত ব্যবহার জায়েজ।

৪. কোরবানির সময়:
১০ই জিলহজ্জ ঈদের নামাজের পর থেকে ১৩ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এই সময়ের বাইরে কোরবানি শুদ্ধ নয়।

৫. জবাইয়ের পদ্ধতি:
"বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার" বলে শরীয়তসম্মত উপায়ে জবাই করতে হবে।

গলার শিরা, খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী কাটা আবশ্যক।

৬. মাজহাবভিত্তিক পার্থক্য:
হানাফি: কোরবানি ওয়াজিব।

অন্যান্য মাজহাব: সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

গোশত বণ্টন: সব মাজহাবেই গরিবদের দান জরুরি, তবে বণ্টনের পরিমাণ নিয়ে ভিন্নতা রয়েছে।

৭. সতর্কতা:
কসাইকে গোশত বা চামড়া মজুরি হিসেবে দেওয়া নিষিদ্ধ।

গোশতের বিনিময়ে পশুর চামড়া বিক্রি করলে তার মূল্য সদকা করতে হবে।

৮. হাদিসের বর্ণনা:
নবীজি (সা.) বলেছেন,

"কোরবানির দিনগুলোতে মানুষের নিকটতম কাজ হলো রক্ত প্রবাহিত করা।" (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৬)।

তিনি কোরবানির গোশত নিজে খেতেন, দান করতেন এবং সংরক্ষণ করতেন (বুখারি)।
Tags

Post a Comment

0 Comments

Top Post Ad

Bottom Post Ad

Ads Area